লক্ষীর ভান্ডার নিয়ে বড় ঘোষণা মমতার | Lakhir Bhandar

মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার” প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন। এই প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল মহিলাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের এবং পরিবারের উন্নতি করতে পারেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্রকল্পটি চালু করা হয়, এবং এর মাধ্যমে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মহিলা উপকৃত হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রায়ই বলেছেন, “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প বাংলার মা-বোনেদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ।”

নতুন ঘোষণা ও সম্প্রসারণ।

গত ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আরও একটি বড় ঘোষণা করেন। তিনি জানান যে, ডিসেম্বর মাস থেকে এই প্রকল্পে নতুন করে ৫ লক্ষ ৭ হাজার মহিলা যুক্ত হচ্ছেন। এর ফলে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আওতায় মোট মহিলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২ কোটি ২১ লক্ষ। মমতা ব্যানার্জি আরও বলেন, “এটি একটি বড় পদক্ষেপ, যা মহিলাদের উন্নতি এবং স্বনির্ভরতা অর্জনে সাহায্য করবে।”

এছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী জানান যে, রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের জন্য বছরে অতিরিক্ত ৬২৫ কোটি টাকা খরচ করবে। অর্থাৎ, রাজ্য সরকার প্রতি বছর এই প্রকল্পের জন্য আরো বেশি আর্থিক সাহায্য প্রদান করবে। ১লা ডিসেম্বর থেকে এই অর্থ প্রদান শুরু হবে এবং তা সোজা মহিলাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।

আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ও সুবিধা।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আওতায় দুই ধরনের মহিলাদের সহায়তা প্রদান করা হয় — সংরক্ষণ শ্রেণী ও অসংরক্ষিত শ্রেণী।

সংরক্ষণ শ্রেণী: এই শ্রেণীর মহিলারা ১২৫০ টাকা করে মাসিক আর্থিক সহায়তা পান।
অসংরক্ষিত শ্রেণী: আগে এই শ্রেণীর মহিলারা ৫০০ টাকা পান, কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলার মতো আর্থিক সহায়তার পরিমাণ অন্য রাজ্যে দেওয়া হয় না।” এটি প্রকল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যা বাংলার মহিলাদের আর্থিক উন্নতিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে।

শর্তাবলী ও আবেদন পদ্ধতি।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কঠোর শর্ত রাখা হয়নি, যা অন্য রাজ্যের প্রকল্পের তুলনায় একটি বিশেষ সুবিধা। যদি একটি পরিবারের ৪টি মহিলা সদস্য থাকেন, তবে তারা সকলেই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এতে তাদের জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উন্নতি সম্ভব হবে।

এছাড়া, বিধবা ভাতার জন্য কোনো আলাদা আবেদন করতে হয় না। যদি একজন মহিলা ৬০ বছর বয়সী হন, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি এই ভাতা পাবেন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং সোজা রাখা হয়েছে, যাতে কেউ কোনো রকমের সমস্যায় না পড়ে।

আবেদন প্রক্রিয়া ও আবেদনকারীদের সংখ্যা
প্রকল্পের আওতায় আসার জন্য অনেক মহিলাই “মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্প” অথবা “দুয়ারে সরকার” ক্যাম্পের মাধ্যমে আবেদন করেছেন। ২৪ হাজারেরও বেশি মহিলা মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পের মাধ্যমে আবেদন করেছেন। এর পাশাপাশি, অনেক মহিলার আবেদন বিভিন্ন সরকারি ক্যাম্পের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিকদের জানান, “প্রায় ২৪ হাজার মহিলা মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছিলেন। আবার অনেকে দুয়ারে সরকার ক্যাম্পের মাধ্যমে আবেদন করেছেন।”

বাংলার স্বতন্ত্র প্রকল্প
বাংলার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, এটি সম্পূর্ণরূপে রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে, এবং এখানে কোনো ধরনের পদ্ধতিগত জটিলতা নেই। অন্যান্য রাজ্যে যেখানে একাধিক শর্ত থাকে, বাংলার এই প্রকল্পে তা একদমই নেই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা হবে এবং তাদের স্বনির্ভর করা সম্ভব হবে।”

এছাড়া, এই প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান ইত্যাদি বিষয়ে নানা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার আশা করছে যে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যা সমাজের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এখন, এই প্রকল্পটি রাজ্যে মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, এবং এটি বাংলার রাজনৈতিক এবং সামাজিক চিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।

Leave a Comment